অ্যাজমা বা হাঁপানি কি ?
অ্যাজমা বা হাঁপানি বলতে মানব দেহের শ্বসনতন্ত্র তথা ফুসফুস ও শ্বাসনালীর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায়প্রদাহ-জনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগকে বুঝায় । এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-
– শ্বাসনালীর অতি সংবেদনশীলতা
– শ্বাসনালীর সংকোচিত হয়ে আসা এবং
– শ্বাসনালীর প্রদাহ
রোগের লক্ষন বা উপসর্গসূহ:
-শুকনা কাশি,সাধারনত রাতে বৃদ্ধি পাওয়া
-শ্বাস গ্রহনে সমস্যা হওয়া
-বুকে ভারি চাপ অনুভব করা
-কফ থাকতে পারে
-শ্বাস নেওয়ার সময় বাশির মতো শব্দ হওয়া
কাদের বেশি হয়?
*লিঙ্গ ভেদে পার্থক্য না হলেও, কর্মক্ষেত্রের ভিন্নতার কারনে সাধারনত পুরুষদের এই রোগ সামান্য বেশি হতে পারে।
কোন বয়সে বেশি হয়?
*অ্যাজমারোগ সাধারনত কম বয়সেই দেখা দেয়, তবে বড়দের ক্ষেত্রেও এই রোগ দেখা দিতে পারে । শতকরা ১০ ভাগ শিশুদের এবং ৫ ভাগ বয়স্কদের এই রোগ হয়।
কি কি কারনে অ্যাজমা প্রকোপ হতে পারে ?
- বংশগত কারনে
- অতিরিক্ত ধুলাবালির সংস্পর্শে আসলে
- ধু্মপানজনিত কারনে
- এলার্জিজনিত কারনে
- ঠাণ্ডা জনিত কারনে
- নোংরা পরিবেশে বসবাস করলে
- শ্বাসনালী কিংবা ফুসফুসে প্রদাহজনিত কারনে
- কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্য কোনো ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়
- কল-কারখানা , গাড়ির দুষিত ধোঁয়ার কারনে
- এছাড়াও আবহাওয়ার তারতম্য, শারীরিক পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারন অ্যাজমা সাথে জড়িত ।
কোন সময় হয় ?
বছরের যে কোনো সময়ে এই রোগ দেখা দিতে পারে , তবে শীতকালে এই রোগের প্রকোপ অধিক হারে বৃদ্ধি পায় ।
কি কি পরীক্ষা করাতে হবে ?
কোন রোগীর অ্যাজমা উপসর্গগুলো দেখা দিলে চিকিৎসক কয়েকটি ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নেন ।সাধারনত নিন্মোক্ত পরীক্ষাগুলোর করা হয়ঃ
-স্পাইরোমেট্রি
-কফ পরীক্ষা
-বুকের এক্স-রে
-রক্ত পরীক্ষা
-ধমনীতে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান নির্ণয় পরীক্ষা
-এলার্জি পরীক্ষা ইত্যাদি ।
চিকিৎসাঃ
চিকিৎসক যদি কোন রুগীর অ্যাজমা আছে বলে নিশ্চিত হন তাহলে তিনি নিন্মোক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেনঃ
- ইনহেলারঃ ইনহেলার শ্বাসনালীর প্রসারনে সহায়তা করে ।সাধারনত সালবুটামল, সালমেটেরল, থিওফাইলিন কিংবা ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড ইনহেলার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
- কর্টিকোস্টেরয়েডঃ কর্টিকোস্টেরয়েড সাধারনত প্রদাহনিরাময়ে সহায়তা করে । এছাড়া এটা ইনহেলারের কার্যকরীতা বাড়িয়ে অ্যাজমা প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে । কর্টিকোস্টেরয়েড হিসেবে সাধারনত ফ্লুটিকাসোন, ব্যাক্লোমিথাসোন, প্রেডনিসোলন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় । কর্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলার কিংবা ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় ।
- এন্টি-হিস্টামিনঃ এলার্জি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে ।
- এন্টিবায়োটিক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- অক্সিজেন থেরাপি
- ইমিউনোথেরাপি
- কফ সিরাপ
সুস্থ্য থাকতে হলে করণীয়ঃ
- ধুমপান পরিহার করতে হবে
- ধুলাবালি পরিহার করতে হবে
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে
- বাসা বাড়িতে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে
- এলার্জি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে
- শীতকালে অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহন করতে হবে । পরিবারের অন্য কারো অ্যাজমা সমস্যা থাকলে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
- কোন লক্ষন দেখা দেওয়ার সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে ।
-Dr. Abdul Quaium Auchin